কিন্তু ইদানিং কাল্টূর মনটা ভীষণ খারাপ।মুখ হাঁড়ি করে ঘুড়ে বেড়ায়। ওর শাগরেদরা ওকে বলে , তুই আজকাল কাজে আসছিস না কেনোরে? কাল্টূ খুব হতাশ সুরে বলে - ভদ্দর লোকেরা যে এত চুরি চামারি করবে ও ভাবতেই পারেনা। আজ কাল ওর মত অরিজিনাল ছোটো খাটো চোরদের কেউ পাত্তাই দিচ্ছে না। থানা ফাঁড়ির সামনে দিয়ে ঘুরে বেড়ালেও কেউ ওর দিকে তাকাচ্ছেই না।সবাই বড় বড় চোরদের নিয়ে ব্যস্ত।
ও শালা এই ব্যাপার। বাঁশ কেনো ঝাড়ে ,দে আমার গাঁ........./। শোন, একটা ভালো নিউজ আছে। চল সৌদিতে বই লাগাই। ভালো দেবে বলেছে,। কাল্টু বললো - তাই নাকি। যেমনি শোনা, তেমনি কাজ। ওরা তিনজনে মিলে পরের দিন এজেণ্ট এর কাছে পাস পোর্ট জমা দিয়ে আসলো। মোটামুটি তিন মাসের মধ্যে ভিসা চলে আসলো। মেডিকেল হয়ে গেল। টাকা পয়সা ধার করে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা জোগাড় করল.। তারপর তিন বন্ধু মিলে একদিন প্লেনের টিকিট কেটে সোজা সৌদি আরবে চলে গেল। কিন্তু কাল্টুর ভাগ্য ভালো হল না , এজেন্ট যে কাজ দেবে বলে ছিলো সেটা না দিয়ে এক খেজুর বাগানের মালিকের জিম্মায় রেখে কেটে পড়লো। কাল্টু আর কি করবে ? খেজুর পাড়া, খেজুর গাছের পরিচর্যা করা ,ভেড়া চরানো আর মালিকের ছোটো খাটো ফাই ফরমাশ খাটা কাল্টুর এই গুলিই কাজ।
ঘুরতে ঘুরতে এক দিন এক বাজারে দুটো ছেলের সাথে দেখা হয়ে গেল কাল্টুর।কথায় কথায় সে জানতে পারলো তাদের মধ্যে একজন বাংলা দেশী আর একজন পাকিস্তানি। তারা তাদের নিজের কম্পানী থেকে পালিয়ে এসে কাটা পাস পোর্ট নিয়ে নানান রকম ধান্দা করে অর্থ উপার্জন করে।পাকিস্তানি আস্তে আস্তে তাকে বললো " বস ,তুমি নাকি হাত সাফাই জানো? তা আমাদের দলে যোগ দেবে নাকি?"
কথাটা শুনেই কাল্টুর মাথাটা হঠাৎ গরম হয়ে গেল। সে বললো এক দম বাজে কথা বলবি না । শালা কাটা মাল। তোরা যে দেশের খাবি সেই দেশেরই সর্বনাশ করবি। কাটা মাল বলাতে সেও রেগে কাঁই। জানি জানি,সব জানি আমরা। তুই দেশে কি করে বেড়াস। কাল্টু তার উত্ত রে জানালো " আমি আমার দেশে কি করছি না করছি সেটা আমার ব্যাপার .। তোদের দেশে গিয়ে তো হাত পাতছি না।"জেল গুলো তো পাকিস্তানি আর বাংলা দেশীতে ভরতি হয়ে গেছে। যা যা কেটে পড় এখন। ওরা আর কথা না বাড়িয়ে অন্য দিকে চলে গেল। কালটু খেজুর গাছ পরিচর্যা করতে করতে ভাবতে লাগলো হাতে টাকা পয়সা জমলেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ি ফিরে যাবে। বাড়িতে দুটো খেজুর গাছ লাগাবে আর শুয়োরের চাষ করবে । লোন করে যে টাকা এনে ছিল কয়েক মাসে তা প্রায় শোধের মুখে। এক দিন ও শুনতে পেল সেই পাকিস্তানি ছেলেটাকে সৌদি পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। শপিং মল থেকে খাবারের প্যাকেট তুলে নেওয়ার জন্য।
তিন বছরের মাথায় কাল্টু বেশ কিছু টাকা পয়সা জমিয়ে বাড়ি ফিরে আসলো। কথা মত বাড়িতে দুটো সৌদি খেজুর গাছ লাগালো। এক টুকরো জায়গা কিনে শূয়োর চাষে মন দিল। কাল্টু এখন ছোটো খাটো চুরি চামারির কথা ভুলেই গেছে। বউ বাচ্চা নিয়ে বেশ ভালোই আছে আজকাল। প্রবাস জীবন তাকে অনেক স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিয়েছে । দেশে থাকলে হয়তো অন্য খাতে জীবন বইতো তার।
আমাদের দেশে এই রকম হাজার হাজার কালটু আছে যারা তাদের কঠিন প্রবাস জীবনের বিনিময়ে নিজেদেরকে সমৃৃদ্ধ করেছে দেশকে সম্পদশালী করেছে । আমরা কি তার খোঁজ রাখি?