- এই দাঁড়া দাঁড়া।তুই এদিকে আয় ,এদিকে আয়।💔💔
এই বর্ডারের রাস্তা দিয়ে তুই কোথায় যাচ্ছিস? চেনা চেনা মনে হচ্ছে না তো! তুই কি ইন্ডিয়ান?
-না স্যার আমি ইন্ডিয়ান না। আমি একজন বাংলা দেশী নাগরিক।
বলিস কিরে? তোর পাস পোর্ট আছে।
-না স্যার আমার কোনো পাস পোর্ট নেই ।
-কি সর্বনাশ! হাত উচু কর, হাত উচু কর।
- এদিকে আয় তাড়া তাড়ি ,তল্লাসি করবো ।
- স্যার আমার কাছে কিছুই নাই। কতোগুলা কলা আর এক হাজার টাকা আছে।
- তাইতো দেখছি।
তুই হিন্দু নাকি মুসলমান?
স্যার আমি হিন্দু ও না ,মুসলমান ও না ।
-তবে কি তুই?
স্যার আমি এক জন বাংলা দেশী প্রেমিক।
শালা, গুল মারার আর জায়গা পাসনি। পাছায় বাড়ি পড়লেই প্রেমিক বলা ছুটে যাবে।বাংলা দেশের কোথায় বাড়ি বল?
- স্যার যশোরের সুলটিয়া আমাদের বাড়ি।
- এখানে কিসের ধান্দায় এসেছিস ? ঠিক করে বলবি।নইলে......।
ওইতো স্যার প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে ।
বিনা পাসপোর্টে তুই প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিস, তোর সাহস তো কম না।
কিভাবে আসলি বল ?
- স্যার দালাল ধরে। কিন্তু স্যার দালাল আমার সঙ্গে বেইমানি করেছে। দালাল বললো তুই এই পথ দিয়ে চলে যা আমি পরে আসছি। এখানে আসার পর দেখি পিছনে দালাল নাই।
আবার গুল মারছিস। হাবিলদার ডান্ডা লে আও।
- না স্যার আমি ঠিক বলছি। আল্লাহর কসম।
এইতো, তুই মুসলমান আছিস। হারামি কোথাকার।
ভাবছিলাম কলা গুলো খাবো কিন্ত এখন আর খাওয়া যাবে না।
- তোর প্রেমিকার সঙ্গে কি করে যোগাযোগ হলো বল? কত দিন ধরে প্রেম চলছে ?
স্যার ফেস বুকের মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে প্রথমে যোগাযোগ হয়। এখন প্রায় পাঁচ বচ্ছ র আমাদের প্রেম চলছে।
- তা তুই পাস পোর্ট করে আসলি না কেন?
-স্যার ধরা পড়ে যেতে পারি এই ভয়ে। ভারতে অনেকেই এখনো দালাল ধরে আসে।
একদম চুপ্ , আমাকে দালাল চেনাচ্ছে!
- তোর প্রেমিকার নাম বল। বাড়ি কোথায়? মোবাইল নাম্বার দে।
- তার বাড়ি স্যার চেতলায় হিজড়ে পট্টিতে । মোবাইল নাম্বার হলো ২৩২৩৪৫৪৫৬৮। নাম শান্তনা মন্ডল।
- হাবিলদার সাহেব ফোন লাগান ম্যাডামকে।
- জরুর সাব , ফোন দিচ্ছি।
- হ্যা স্যার ধরুন, রিং হচ্ছে।
- হ্যালো ম্যাডাম , আমি কলাগাছি বর্ডার পোস্ট থেকে বলছি, কমান্ডার সাহেব।
- হ্যা হ্যা বলুন স্যার।
- বলছি বাংলাদেশে আপনার কোনো পরিচিত লোক আছে?
হ্যা স্যার অবশ্যই আছে। আমার লাভার আছে। ওর নাম মকবুল। ওর আজকেই ভারতে আসার কথা আছে।
কিন্তু কেনো স্যার ?
মকবুল আমাদের হাতে ধরা পড়েছে। বিনা পাস পোর্টে ভারতে এসেছে। ওকে আমরা এক্ষূনি থানায় হ্যান্ড ওভার করবো।
- না-না- স্যার ওকে থানায় পাঠাবেন না। যত টাকা লাগবে আমি দিতে রাজি আছি।
- ম্যাডাম আপনি কিন্তু বাজে কথা বলছেন। আমাকে কি আপনি ঘুষ দিতে চাইছেন? প্রোয়োজনে আপনাকেও তুলে নিয়ে আসবো। কার সঙ্গে কথা বলছেন একটু খেয়াল রাখবেন ম্যাডাম। বাই দি বাই ,আপনি ওখানে কি করেন?
-স্যার আমি কি করি সেটা মকবুল কে বলা যাবে না।ও তাহলে কষ্ট পাবে। তবে আপনাকে আমি বলতে পারি।
- ঠিক আছে আপনি বলুন । ভয়ের কিছু নেই।
-- স্যার আমিও একজন বাংলাদেশী কিন্তু এখন আমি ভারতীয় । প্রায় সাত বছর আছি এখানে। সব কাগজ পত্র বানিয়ে নিয়েছি। আর পেটের দায়ে হিজড়া হয়েছি। তবে আমি আগে পুরুষ মানুষ ছিলাম।
আচ্ছা আচ্ছা তার পর কি করে হিজড়া হলেন।
- কি ভাবে আর, এখানে এক ডাক্তার বাবু আছেন ,উনিই অপারেশন করে হিজড়া বানান। ২৫ হাজার টাকা দিলেই হলো।
-শালা নেমকহারাম ,ভালোইতো ধান্দা বেছে নিয়েছিস। তোকে পরে দেখছি।
- গাল দিবেন না স্যার। দেশের বাড়িতে বাবা মা অসুস্থ ছিল, তার পর বাড়ি ঘর সব ভাঙ্গনে খেয়ে নিলো।
বাঁচার জন্য কিছু তো করতেই হবে স্যার।
- তাহলে তুই কেনো মকবুল কে ফাঁসালি?
- আমি ফাঁসাইনি সাব। ওইই আমার প্রেমে পড়েছে। অনেক বার বলেছি , বুঝিয়েছি কিন্তু ওই ড্যামনা কিছুতেই বোঝেনা। শুধু বলে আমি তোমার কাছে যাবো।
- এই মুখ সামলে কথা বলবি। তোর প্রেম করা ঘুচিয়ে দেবো।
-স্যার আপনাকে বাপ বলছি মুকবুলকে ছেড়ে দিন। তাছাড়া মকবুলকে ও হিজড়া বানাবো ভেবেছি। কাগজ পত্র বানিয়ে দেবো চিন্তা নেই।
- ব্যাটা বদমাস।
স্যার গাল দিবেন না। তাহলে আমরা হাত্ তালি দিব আর আভিশাপ দিব। আপনার ছেলে মেয়ের অমঙ্গল হবে।
- চুপ্ কর হারামখোর। এমন পিটাবো দেখবি ...। ফোন ছাড় শালি।
- স্যার শান্তনা কি বললো?
- তোর মাথায় কি আছেরে মকবুল ? গরু খেয়ে খেয়ে তুই একটা আস্ত আবাল হয়েছিস। শালা হিজড়ের প্রেমে হাবু ডুবু খেয়ে নদী সাঁতরে সোজা ভারতে চলে এসেছিস। সঙ্গে আবার কলা। বউকে কলা খাওয়াবি আদর করে নাকি?
হাবিলদার সাহেব মকবুল কে থানায় পাঠাতে হবে । গাড়ীতে ওঠান ।
- কি বলছেন স্যার শান্তনা হিজড়ে? আমারতো সব সর্বনাশ হয়ে গেল স্যার। আমাকে জেলে পাঠাবেন না স্যার । আপনার হাতে পায়ে পড়ছি। আমি কি করে বাঁচবো স্যার।
- হাবিলদার সাব কিছু বলবেন?
- বলছিলাম স্যার ,হিজড়াদের অভিশাপ ভালোনা। কখন কি হয়। ওকে ছেড়ে দিলেই ভালোহবে সাব।
আপনাকে কিছু ভাবতে হবে না। যা করার আমিই করবো । ঝামেলা বাড়িয়ে লাভ নেই। বেচারা একে ঠকে গেছে।
বলছেন? এই শোন মকবুল ,আবার কখনো যদি হিজড়ের প্রেমে পড়েছিস আর ভারতে বিনা পাস পোর্টে এসেছিস তোকে এমন মার মারবো তখন বুঝবি। যা ভাগ। বাংলা দেশী প্রেমিক।
হাবিলদার সাহেব ওকে বি ডি আর কাছে পৌছানোর ব্যাবস্থা করুন । আমি সব ব্যাবস্থা করছি।
মকবুল ফ্যাল ফ্যাল করে আকাশের দিকে চেয়ে থাকলো অনেকক্ষন। চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পড়তে পড়তে ঝাপসা চোখে গাড়িতে উঠে বসলো।তার স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার আজ। যাওয়ার সময় কলা গুলো দিয়ে বললো" কলা গুলো আপনারা যদি খান তাহলে আমি সবচেয়ে খুশি হবো স্যার।
মকবুলের প্রেমের কোনো দোষ ছিল না। সীমানারও কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিলনা । ছিলো শুধু সমাজ ব্যাবস্থার অবক্ষয়ের ও জড়তার ছবি।👮👮
ডাঃকাজল কুমার বক্সী।
বগুলা, নদিয়া,
৫/৮/২০২৩
-